Monday, April 11, 2011

ক্রেডিট কার্ড

অনেকগুলো ক্রেডিট কার্ডে অনেক লিমিট, সিলভার-গোল্ড
পাড়ায় পাড়ায় হাতছানি দিয়ে ডাকে এটিএম বুথ
কদাচ পা বাড়াই, কদাচ অবজ্ঞা করি নিতান্ত অবহেলায়,
এটিএম বুথে অনেক টাকা, প্লাস্টিক মানি মুখ থুবড়ে পড়ে পকেটে
আমি পকেট হাতড়াই, যত্নে যতন করি যেন সাত রাজার ধন!

এটিএম বুথ আমার স্বজন, কার্ড পাঞ্চে টাকা আসে, শপিং হয়
টাকা আমার প্রিয় খুব তবু মাঝে মাঝে মনে হয়
কার্ড ঢুকালে যদি টাকার বদলে বেরিয়ে আসতো কোনো রূপসী
যার দীঘল কালো চুলে মুখ লুকাতাম সবিস্ময়,
যদি কার্ড ঢুকালে বের হতো এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা
আমি তবে খোঁপায় গুঁজে দিতাম তাঁর, ভালোবেসে!

একটা ক্রেডিট কার্ডে যদি আসে প্রেমের গোলাপ
আমি তবে গোলাপই নেবো, টাকাটাই সব নয় প্রেমময় গোলাপের কাছে
আমি গোলাপের পাপড়ি ধরে এগুতে যাবো
ভালোবাসা বিলাবো দেশ থেকে দেশে, মানুষে-মানুষে।

আমাকে একটা ক্রেডিট কার্ড দাও ব্যাংকওয়ালা
যে কার্ড আমাকে দেবে এক ঝাঁক পায়রা; শান্তির কপোত
তাদের ছড়িয়ে দিতাম দেশ থেকে দেশে-
ইরাক, ইরান, লিবিয়া, আফগানিস্থান কিংবা আফ্রিকার কোন দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে
অথবা জাতিগত দাঙ্গায় মরতে যাওয়াদের দেশে
আমার এ কার্ড হয়ে যেতো বারেবারে শান্তির শাদা পতাকা।

একটা কার্ড দাও, আমাকে একটা কার্ড দাও ব্যাংকওয়ালা
একটা ক্রেডিট কার্ড চাই আমার নিতান্ত প্লাস্টিকে মোড়া,

আমি প্রমাণে বসেছি আজ প্লাস্টিকেও জাগে প্রেম; বিশ্বময়!

Sunday, April 3, 2011

রাত নিয়ে কয়েকটি কবিতা

রাত-১
আর একটা রাত আমাকে নির্ঘুম করে আটকে রেখেছে। আমি লটকে আছি তার মোহময়তার কাছে। আমার সাধ্য থাকে কী আর তাকে অস্বীকার করে ঢলে পড়তে ঘুমে; জন্মের ঘুমে! আজ বিকেলে আমি একটা ঘুমকে চুরি করে নিয়ে আসতে চাইছিলাম ঘুমের বাড়ি থেকে। অথচ ধরা পড়ে যাবার ভয়ে শেষমেশ চুরি করা হয়নি কিছুই।

তোমাদের কাছে কোন একরাতে আমি একটা ঘুম ধার চেয়েছিলাম শুধুমাত্র একটা রাতের জন্যে। অথচ কী নির্লিপ্ততার চাদরে ঢেকে রেখেছিলে নিজের মুখ। তাই আমি আলগোছে নিজেকে ফিরিয়েছিলাম রিক্ত নয়নে একবার তাকিয়েছিলাম তোমাদের পানে। যতদূর চোখ যায় ততদূর থেকে তাকিয়েছিলাম যদি ভুল করে হলেও ঈশারায় ঢাকে কোন হাত!

কাল আমার বাড়িতে অনেকগুলো ঘুম বেড়াতে আসবে। আমি আনমনে আমার খলুই ভরে রাখবো ঘুম দিয়ে; গভীর ঘুম দিয়ে।

খোদার কসম আমি তোমাদের কানাকড়িও ধার দেবো না!
-------------------------------------
রাত-২
গভীর রাতের কাছে আমার ব্যক্তিগত কিছু চাওয়ার আছে!

প্রতিদিন নিয়ম করে রাত নামে পৃথিবীতে। সেই কবে থেকে যে রাত শুরু করেছিল তার পথচলা আজ অবধি থেমে গেছে বলে শুনিনি কখনো। আমার জন্মের পূর্বেকার থেকে রাতের গল্প শুনে এসেছিলাম আর জীবন চলার পথে কত রাত যে পার করে দিয়েছি তার হিসেব রাখার প্রয়োজন মনে করিনি কখনো। আর সম্ভব হবে বলেও বিশ্বাস করা কঠিন আর অসম্ভবই কোনো এক!

প্রতিবার যখন রাত তার স্বরূপ নিয়ে হাজির হয় আমার কাছে। আমি রোজ রোজ তাকে স্বাগত জানাই নিজস্ব ঢঙে।আমি রীতিমতো অবাক হই কেন আমি থেকে যাই রোজ রোজ স্বাগত জানাবার দলে অথচ বিশ্বেস করো রাতের সাথে একান্তে কোন কথা বলা হয়ে ওঠেনি অদ্যাবধি। যদিও রাতের গল্প আমার কাছে অসাধারণ কোনো এক!

রাতের আকাশ দেখলে মাঝে মাঝে নিজেকে ভাবতে বসি। কী অদ্ভুত মোহময়তার চাদর দিয়ে ঠাসা। ঠিক ঠিক আমার আর আমাদের মনের মতো! আমাদের মনের প্রতিবিম্ব হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রাতের আকাশ।

রাত আমাদের ডাকে ফি বার। আমরা কখনো কখনো তার ডাকে সাড়া দিই নিজকে আবিস্কারের কালে আবারো হারিয়ে যাই রাতের গহীনে। যারা পথ চেনে তাদের কথা আলাদা!

আমি কবে আলাদাজনদের দলে নাম লিখাবো?
-----------------------------------------
রাত-৩
রাতের কাছে আছে আমার পূর্বজন্মের দায়!

একদিন দিনের কাছে একটা দিন ধার চেয়েছিলাম নিজের কাছে রাখবো বলে। কিন্তু দিন, দিনমান দিনের পিছে ঘুরে বলে আমাকে দিতে পারেনি কিছু। তাই বৃথা মনোরথে পথের ধারে বসার ক্ষণে অভিসম্পাত ছুঁড়ি বাতাসে যেন তার গায়ে গিয়ে বিঁধে! বোকারূপি হাসি ফোটে ঠোঁটের কোণে। সব পাবার খানিক তৃপ্তিতে হাঁটা ধরি পথ; বাড়ির পথ!

একদিন একটা দিন আমাকে দিনের সময়টুকু একান্ত করে দেবে বলে বের করে নিয়ে এসেছিলো তার ঘর থেকে। কিন্তু দিনমান অপেক্ষারূপী ক্লান্তি নিয়ে ফিরেছিলাম ঘরে। দিনের কাছে কিছু পাইনি বলে তাকে আনমনে নাম দিয়েছিলাম ব্যস্ততম দিন। তাই অদ্য তার কাছে কিছু চাওয়ার খতিয়ানটা তুলে রেখেছি সিন্দুকে জন্মের মতো করে। যার মুখে ঝুলে পড়ছে এক বিশালাকার তালা; খুলবার নয় মোটেও!

তাই দিনের কাছে চাওয়ার কালে একটা দিন চুপিসারে বলেছিলো কোন এক রাতের কথা। যার বুকে জ্বলজ্বল আঁকা দিনের ধ্বংসাবশেষ। চাঁদ বলে নাম দেয় যাকে আর সবে। আমিও তাকে চিনেছি অদ্য।

আমার দিনগুলো দিন থেকে রাতে যায়। আমিও যাই তার পিছু পিছু। বিশ্বেস করো, এ আমার আরাধ্য রাত। দিনের সবটুকু উষ্ণতা জড়ানো রাত। কাছে এসে কাছে ডাকার রাত!
------------------------------------
রাত-৪
আমার বদলে যাওয়া দিন বলে আয় রাত আয়
আমার বদলে যাওয়া রাত বলে আয় রাতের গভীরে আয়!

তবু আমার ফেরা হয়না এই আপাত দৃশ্যমান পথ থেকে যেখানে এক বিকেল হতেই সমূহ আয়োজনে মেতেছিলো অপরাপর সব; রাতের জন্যে। তাদের কেউ কেউ ছিলো আমার খানিক পরিচিতজন বাকিরা অপরিচিতের মুখোশ পরে বসা ছিলো জন্মের অব্যবহিত পর থেকেই। তাই কারো মুখচ্ছবি ভাসেনি কভু মনের গহীনে!

সে সময়ে রাতের গল্পে মেতেছিলো ক’জন আচানক যুবা। যাদের কাছে রাত মানে কোন সে মাহেন্দ্রক্ষণ। তাই রাতকে পাহারা দিতে রাতভর রাতের কাছে নিজেদের সমর্পণ করবে বলে গোয়ালে ফের বেঁধে রাখে হালের বলদ। বলদের কানে কানে পৌছে বলে দূরে আজো জেগে থাকবে অদ্ভূত রাত। তাই জাবর কাঁটারক্ষণে তারাও যেন অনুভবে দেখতে থাকে মোহময় রাত।

এ পথ জেনেছিলাম একদিন পথে নেমেছিলো রাতের পথ ধরবে বলে। ফলে আমার বদলানো দিন বলে রাতের কথা। আর বদলে যাওয়া রাতও বলে সে একই কথা।

রাতের গভীরে জেগে থাকে আরেকটা রাত। একান্তই ভালোলাগা আর ভালোবাসার মুগ্ধতাজড়ানো রাত!
-----------------------------
রাত-৫
কেউ একজন হেঁটে যায় পথে তাকে দেখে আর কতক লোক নামে পথে এটাই হল পথের গল্প। পথচলতি পথিকের পায়ের দাগে পথও নিয়ে নেয় নয়া রূপ। পায়ে চলা পথের ঘাস মরে যায়। বাকি সব যারা নামেনি কখনো সে পথেও তারা ভয়কে জয় করে নামে পথে। তারপরের কাহিনী সবার জানা!

কোন একদিন একা ছিলাম বলে মনে ছিল ভীষণ ভয়। একা একা চলতে। কিছু বলতে গিয়ে কোন এক সময়ে অজানা আশংকা কাজ করতো মনে পাছে কে কী ভাবে আর কার প্রতিক্রিয়াই বা হয় কেমন? কিন্তু একটা সময়ে এসে দেখি এসব মনের ভূল আর ভয়! কার এতো সময় রয় হাতে যে আশপাশকার খবর রাখে!

একদিন যখন জন্ম নিয়েছিলাম সেদিন কান্নার স্বরে জানান দিয়েছিলাম নিজের আগমনীবার্তা। তারপরের কাহিনী অশেষ মমতায় শুধু শুধু বড় হওয়া। হাঁটতে শেখা হয়নি এমনি এমনি। কতশত হোচট আর হামাগুড়ি আর এখন দৌড়ঝাপের পর্যায় চুড়ান্ত পর্যায়ে!

দিনে দিনে সূর্য দেখা শিখে যাওয়া। অতঃপর সূর্য ডুবলে বাধ্য ছেলের মত ঘুমুতে যাওয়া। এসব আজো আছে। কিন্তু এই সময়ে এসে দেখি সূর্য ডুবলেও যে তার স্থান দখলে নেয় তার মাঝেও আছে সৌন্দর্যসূধা। রাতের; নিছক রাতের সৌন্দর্য।! আমি রাত দেখি ফি দিনান্তে ফি রাতের মাঝে!

রাত আমায় টানে খুব। আমি রোজ রোজ হারাতে চাই রাতের গহীনে!
---------------------------------------
রাত-৬
রাত এলো বলে কেউ কেউ গেয়ে যায় রাতের গান। আমি তন্ময় হয়ে শুনি। আমার শোনার কাল দীর্ঘায়িত করে যাই নিজের মত করে। আমি হাঁটতে গেলে সে পথে মাঝে মাঝে কেউ আগলে দাঁড়ায়। আমি দেখি না তারে শুধু শুধু কেউ কোনজনের পায়ের চিহ্ন ভাসে চোখে আবছা আলোয়।

কাল রাতেও রাত পাহারা দিয়ে রেখেছিল রাতকে-ভোর অবধি। ভোরের আলোতে মুখ লুকিয়েছে সে রাত কোন এক বাঁশের ঝোঁপে। এমনটা ছিল আর একটা রাত নামার আগ পর্যন্ত!

রাতের নামে আর একটা রাত উৎসর্গ করে দিয়ে যেতে চাই রাতের জন্য। রাত আসুক রাতকে নিয়ে আমি নামবো পথে ফের।

আমি আজ পথে নামতে চাইছি খুব একা হয়ে। যে থাকে সাথে সে আছেও একই ঢঙে। আমি তাকে নিয়ে রাত পাহারা দেবো আজো। রাতের সাথে রাত মিলিয়ে রচনা করবো ফের আর একটা রাত;একান্ত রাত!
------------------------------------
রাত-৭
আমাদের চাওয়ার কালে আমরা হয়ে যেতে চাই রীতিমতো বেপরোয়া।

কোন একদিন চাঁদের দেশে বেড়াতে যাবার শখ ছিল খুব। সে নিয়ে মনোমধ্যে ছিল যত আয়োজন। কত পথ পাড়ি দিয়েছিলাম নিজের অজান্তে তার হিসেব রাখা হয়নি আর হয়তো সুযোগও ছিলনা। যাওয়া হয়নি যদিও তবু যাবার অশেষ আকাঙ্খা ছিল ঢের!

চাঁদ রোজকার সূর্যের মত পৃথিবীতে আসেনা। আর তার জন্য তার সে কী আয়োজন আর আমাদের প্রতীক্ষা। দীর্ঘ রাতগুলো পার হবার পর সে যখন খানিক মুচকি হাসিতে ভরিয়ে দেয় পৃথিবীর আকাশ তখন তার সাথে সাথে সে আনন্দে মেতে ওঠে অপরাপর সব। এ আমিও বাদ যাইনি কোনদিন সে হাসি খেলায়!

গল্পে শুনেছিলাম চাঁদে বসে এক বুড়ি চরকা কাটে। আমি দেখেছি এখানকার অনেক বুড়িমাকে কিন্তু দেখা হয়নি চরকা কাঁটার সে আচানক দৃশ্য। দেখা হবে না বলে মানতে শেখার কালের শুরু হবার পরের সময়টা এখনও কাটে চাঁদের দেশে যাবার সমূহ প্রস্তুতি নিয়েও। জানি না এর ভবিতব্য তবু ভাবতে বসার পালে হাওয়া লাগাতে দোষ কই!

রাত আসে রাত যায় তবু রাত ফি বার চাঁদকে নিয়ে আসতে পারেনা। রাত আমার সুহৃদজন; চাঁদও! রাত আর চাঁদ আয় তবে একসাথে। আমি একইসুরে গাইতে চাইছি তোদের গান!
----------------------------------------
রাত-৮
মাঝে মাঝে ভাবতে যাই একদিন যখন টুপ করে মারা যাবো সেদিন প্রথম দেখাতেই যার সাথেই পরিচিত হবো তাকে শুধাবো কী করে রাতের আকাশ হওয়া যায়। তারপর রাতভর পাহারা দেবো পূরো পৃথিবী। নিশাচর কিছু পাখিকে সাথে রেখে পাহারা দেবো আর বাকি সবার উদ্দেশে রাতভর শুনাবো রাতের গান।

রাত আমার পছন্দের খুব। রাতের আকাশ তার চে'ও! কী নির্ভার সম্মোহন দৃষ্টি। আকন্ঠ ভালোলাগার ছোঁয়া। তারাদের সাথে খেলবো তারাময় খেলা। সে খেলার হার-জিত উহ্য রেখে নিত্যরাত সে একই সূঁতো ধরে পাড়ি দেয়া হবে আর অনেকটা পথ। যে যাবে সে যাবে সাথে। সে-ই থাকবে যে কোন একদিন পথিক হয়েছিল-রাতের পথিক!

যে রাত কোন একদিন আমাকে আহবান জানিয়েছিল তার পথ ধরে হাটার। আমি আজ তার কাছে কৃতজ্ঞচিত্তে তার কাছে পাঠিয়েছি এক উড়ো চিঠি; সইসহ। আমার নামধরে উচ্চস্বরে ডাকবে বলে চিঠির নিচে সেটে দিয়েছি বৃত্তান্ত।

আজ কতদিন হয় আয়নার সাথে আমার দ্বৈরথ চলে। জয়-পরাজয়ের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসেব ভুলে ফি রাত রাতের কাছে সমর্পণ করি নিজেকে।

তবে জানি কোন একদিন আমিও আকাশ হবো-রাতের আকাশ। আর তার বুকে গোটা গোটা হরফে কোন এক নাম লিখা হয়ে থাকবে; কবির-ই সে'জন-কবির য়াহমদ!
----------------------------------------------
রাত-৯
এটা হতে পারে তেমন কোন এক রাতের গল্প!

কোন এক রাতে রাত নেমেছিল পৃথিবীতে। ঘনকালো রাত। নিজে নিজেকে দেখার মত তেমন কোন আলোও অবশিষ্ট ছিলনা। রাতের সংজ্ঞা পাল্টিয়েছিল সে একান্ত।

ঘনকালো রাতের আকাশ থাকে পরিস্কার স্বচ্ছ্ব জলের মত। মনে হয় কোন এক পাখি থেকে আলগোছে ডানা চুরি করে পাড়ি দিই আকাশমাঝে। নিজের মুখ দেখবো বলে। আকাশের আরশীতে নিজেকে কেমন লাগে ভাবতে বসিনি কোন কালে। যদিও রাতের আকাশ আপন হয়ে ধরা দেয় রোজ রোজ। মাথার ওপর ছাঁদ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়। রোদ-বৃষ্টি আর জরা-খরা থেকে আগলে রাখবে বলে তার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে বেশ কিছু সময় ধার করে নিয়েছিল একান্ত আমার জন্যে।

যে রাতে আকাশ দেখি সে রাত অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে ছুয়ে যায় আ-হৃদয়। ফি-বার আমার আহ্লাদিত নেত্র উৎসর্গ করি তার জন্যে।

তোমাকেও বলি আকাশ দেখো;রাতের আকাশ। অজস্র তারা বুকে নিয়ে ঠায় দাঁড়ানো রাতের আকাশ!
--------------------------------------------------
রাত-১০
এ রাতের কাছে আমার দায় আছে। তাই চুপি চুপি রাতের পথ ধরে হাঁটি রাত ভোর আগ পর্যন্ত!

জেনেছি রাতের পথ ভঙ্গুর কোনো। রাত শেষে তবেই শেষ হয় তার পথচলা। এভাবে পৌনঃপুনিক ঢঙে ফিরতিদিনে এসে মেলে ধরে অপার ডানা। পাখা গজাবার সাধ থাকে আলগোছে। যদি কেউ দেখে ফেলে তার কেন্দ্রবৃত্ত তবে একান্তকরে আবারো পথ ধরে আরেক পথের।

এ যে নিছক কোনো এক অদ্ভুত রাতের গল্প। তোমার বাগান ধরে চুপি চুপি নামে পথে। আমি তোমার বাগানের পথ জানি। কিন্তু কোথাও পদস্পর্শ দেখিনি বলে তার পিছু নিতে পারিনি অদ্যাবধি। তাই সমান্তরাল পথে আমাদের পথ চলা হলেও পথে পথে পথের দূরত্ব মাপি; ঘনত্ব দেখি। পথে নেমে করে যাই রাতের গুণকীর্ত্তন।

তবে অদ্যকায় নেমেছে আর এক রাত। রাতের নাম ধরে রাতময় করে যায় রাতবর্ণনা। আমি তার পিছু ছুটি পিছুটান ছাড়াই। এ শহরে জ্বলেছে যত নিয়নবাতি আজ। আমি তার স্যুইচবোর্ডে লিখাতে চাইছি নিজের হস্তাক্ষরের ছাপ। এ শহরে আজ কোন বাতি জ্বলবেনা। ভাসবে শুধু রাত; নিকষ কালোরাত।

হে গোবেশচন্দ্র নগরপিতা, আজ শহরের সব বাতি নিভিয়ে দাও। আজ পুরোরাত রাত নামুক শহরজুড়ে। আমি রাতময় দেখতে চাই মোহময় অদ্যকার রাত।

কেউ একজন ভুল করে হাতে হাত ধরে বলেছিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি না

কেউ যায়, কেউ আসে, কেউ আবার হারিয়ে পড়ে ঘূর্ণাবর্তে
আমি দেখেছি তাদের যাদের কেউ মনে রাখেনি
আমি শুনেছি তাদের যাদের কেউ একজন মনে করে বলেছিলো
আমি তাদের মনে রাখতে চাইনি অথচ বারবার মনেই উঁকি মারে।
এ মন, সেই মনের কাছে হাত পাতে; ভালোবাসায়
মনও ফিরিয়েছে তাদের শুনিনি কোনকালে
তবু আমি বারবার মনের কাছে মন চাইছি, মনের দেখা পাবো বলে,
তবু মন, বিচিত্র মন ফের ভুল করে, ভুল করে ভালোবাসে
ভালোবেসে কাছে গিয়ে থমকে যায় আবার ভালোবাসে
শুনেছি, ভালোবাসার কাল মধুর কোনো এক
দিয়ে যায় শুধুই দিয়ে যায়-
তাই দিন গড়ালে দিন আসে রাতের হাত ধরে।
কেউ একজন ভুল করে হাতে হাত ধরে বলেছিলো
আমি তোমাকে ভালোবাসি না!

দোহাই

পরিস্রুত জলের দোহাই
এখানে একদিন মাংসের হোলিতে মেতেছিল আশ্চর্য যুবা
গলিপথে তার চকিত চাহনি অথবা আচানক শিকড়,
কত জল বয় শিরা ধরে আচানক ঢঙে
আমি কী জেনেছি তার ছলা একান্ত সময়ে মাংসাশী হয়ে!

এভাবে দিন বয় দিনের পথ ধরে
বয়সের ভারে পেকে আসে মাথার চুল
কমে আসে কব্জির জোর, ভাবনাসমূহ
দিনের কলা তীব্রতায় নিশুতি রাত
হেঁকে যায় আলগোছে রাতজাগা পাখির ঠোঁটে!

বাংলাদেশ এক স্বপ্নপতাকার নাম

বাংলাদেশঃ অলুক্ষণে বিভীষণ থেকে এক স্বপ্নপতাকা

জেনেছিলাম সে এক অলুক্ষণে বিভীষণ
যে রাতে চাঁদ ঢেকেছিল মুখ লজ্জ্বায়।
সে চাঁদ ওঠেছিল নিয়ে সমূহ আলো
হায়নার মুখ দেখে হারিয়েছিল আপনার অবয়ব
তবু রাত, সে রাত যে রাত ধরতে পারে
ঝড়ের গতিবিধি তাই রাতময় থাকেনি সে রাত
মাপতে বসেছিল কোন এক স্বপ্নদেশের দুরত্ব।

হে চাঁদ, আমার নিয়ত দেখা চাঁদ
তুমি দেখেছিলে একাত্তুর
আমার উজাড় হওয়া বাংলাগ্রাম
নিথর প্রাণের ধানক্ষেতে রেসকোর্সের মাতম
অথবা হঠাৎই হাওয়ায় হাওয়া জাগানো কালুরঘাট
ইতিহাসের স্বাক্ষী থেকে ইতিহাসের স্বপ্নবুনন।

সে রাত যদিও এক অলুক্ষণে রাত
তবু সে রাতই দেখিয়েছিল পথ সতেজ ভোরের
আমার বাবার ইস্পাতসম হাত ধরে
আমার মা নামের এক পতাকা ওড়াবার স্বপ্ন।

বধ্যভূমি

গো-চারণভূমি যেমন থাকার কথা তেমনই আছে
খুঁটিওলা গরু খুটিছাড়া গরু আরামে ঘাস খায়
———————বর্জ্য ছাড়ে নিঃসংকোচে।
বর্ণিল পাথরখন্ড গুমড়ে কাঁদে
সজীব ডগা-মুড়ানো ঘাস কিংবা ঝোপের আড়ালে
শুধুমাত্র গরুরাই এখানকার অভ্যাগত অতিথি,দর্শক শ্রোতা
হয়তোবা কোনকালের কোন মূর্খের কাজ
অযত্মে-অবহেলায় আকাশ দেখে মূল্যবান পাথর।

কেউ কী জানে না ঐ পাথরের মূল্যমান
কেউ কী জানে না এখানে শায়িত অস্থিমজ্জ্বা,অমিত সন্তান
কেউ কী দেখে না ঐ পাথরের নেত্রজল
কেউ কী দেখে না ঐ বহমান রক্তক্ষরণ?
কে দেখবে
———-আমি
————–তুমি
——————-সে
———————–কে?

কার এতো সময় পড়ে রয় হাতে?
তাই বুঝি গরুরাই এখানে এতো আগ্রহী!

মঞ্চে এক মুক্তিসন্তান

এটা একটা কবিতা, উৎকৃষ্ট কবিতা
ভাবতে পারো আত্মপ্রচার, হয়তো তা-ই
আমার বাবা এক মুক্তিযোদ্ধা, গণযুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা
সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে পেড়ে এনেছিলেন এক দেশ; বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ, তোমার জন্ম যে পথ বেয়ে
সে পথের কোনো এক মাসে এসেছি আমিও
যদিও তুমি আমা থেকে বছর কয়েক বড়
তবু আমিও দেখিনি তোমা থেকে খুব একটা কম
হয়ত তোমার মতো নয় অভিজ্ঞ কোনও এক
ভাবতে পারো পোড় খাওয়াজন, খাঁটি সো্না!

এই ফাল্গুণ গত হয়েছিল গত বছরে
তা লিখে রাখেনি কোনো সংবিধান
ছাপা হয়নি কোনো খবরের কাগজে
কোনো টক-শো তে বসেনি কোনো টিভি চ্যানেল
তবে আমি লিখে রেখেছিলাম বলে ফের অবগাহন করি
আর একটা জ্বলজ্বলে সুর্যে রাখি তুমুল পদক্ষেপ
তো্মাকে সমানে রেখে।

এ আমি গর্ব করতেই পারি আমার পিতাকে নিয়ে
গর্ব করতে পারে আমার পিতামহ, তাঁর পিতা আর পিতামহ
আমার পরিজন, আত্নীয়-অনাত্নীয়
একটা সূর্য সন্তানের দেখা পেয়েছে বলে।
দিন যায়, মাস যায়, আসে আর একটা দিন–মাস
ঘটনা যা-ই ঘটে যাক এই ফেব্রুয়ারিতে
যতই পিলখানা ঝড়ে ঈশ্বরকে কাঠগড়ায় আনে বিশ্বলো্ক
আমি এই চৈত্রে এসে ঘোষণা দিয়েছি শ্রেষ্ঠত্বের
কারণটাও জানে সবে—
মঞ্চে দাড়িয়ে গেছে এক সূর্যসন্তান।

আদি প্রেম

একটা তীব্র পেলব রাতের অপেক্ষায় আছি
যার অধর ছুঁয়ে যাবে মখমল রঙে
আমি ছুঁয়ে যাবো তাঁর হৃদয় অলিন্দ্য; পোড়ামুখি নয় সপ্রতিভ আবেশে,
শুনেছি, রাতের গতরে জড়িয়ে থাকে অশেষ ওম
আমি ওম ছুবো, ওমের গতর ধরে টান দিয়ে ভেতরে দেখে নেবো নির্নিমেষ মোহময়তা,
মোহময়তায় আমার আকাঙ্খা ঢের
তাই ফি-রাত মোহময়তাকে খুঁজে ফিরি দূর্নিবার টানে।

রাতের গতরে বসত করে আদি প্রেম, আমি আদি প্রেমে সওয়ার হবো
গতরে গতরে যদি প্রেম জাগে আমি তবে বোবা দর্শক হবো
দূর থেকে দেখো নেবো সব, কাছে এসে গিলে নেবো সব
এ প্রেম সত্য সত্যই প্রেম নির্মোহ প্রাগৈতিহাসিক!

Friday, April 23, 2010

কবির য়াহমদ


কবির য়াহমদ
_________

কায়মনোবাক্য কায়মনোবাক্যে জড়ায়
একদিন দিন হয় প্রখর রৌদ্রতাপে
জানালার আরশীতে দেখে যায় সে আপনার মুখ
এ মুখ পোড়ামুখি সাজে অবেলার তরে
বেলা বেলা কত বেলা যায়
আমার সময় হয় না কেবল বেলা ধরার!

জন্মে জেনেছি আমি জন্মালেই হাটা ধরা হয়
হেটে যাওয়া পথে, এ পথ বন্ধুর কোনো
পূর্বপুরুষের দেখানো পথ তবু হাটা ধরা চাই নূতন করে
তাই জন্মান্ধক্ষণে সামনে আসে আমার নিশ-পিশ করা হাত,
হাতে হাতে হাত পাতে একটূকরো জলে জমে সখ্যতা
জলে জলে জলকেলি বেলা জানে বেলাময় খেলা
এ এক আচানক কোনো আমাকে নিয়ে খেলে
আমি খেলি তার ছলাকলা নিয়ে-
আমাকে হারায় আমার খোলস; এক নিরীহ কর্পোরেট চাকর।

আমার বলে দেয়া কাল কাল রাতে ঝড় হয়েছিল
ওড়াতে চাইছিল সমূহ কাল তবু মাঝপথ মাঝপথে থামে
পথে পথে আর একটা পথ যোগ দিলে
এ অহর্নিশ পথে থামে এক বেকুব কবি।

শুনেছি, আমার অবিশ্রান্ত সময়ে আমাতে বিতর্ক হয়েছিল
অন্তঃস্থ “আ” নিয়ে। আমিও বলেছি আমি ঠাঁঠ না বাইরের
নাচিনি কোনকালেও বাঈজী নাচ তাই কোন হাতেও ওঠেনি কোন উপঢৌকন
নিজে নিজেতে একেশ্বর হয়েও সব কালের কাছে হয়েছি নত
ক্ষমা চেয়েছি নিজেতে করজোরে একান্ত নিজস্বতায়
আমি আমাতে সমর্পণ করে তোমাদের কাছে বলেছি দৃঢ়তায়
আমিই কেবল আমাকে জানি তাই চুপি চুপি বলি
চলো নষ্ট হই, নষ্ট হয়ে যাই নিজের মাঝে আপনাকে বিলোনোর কালে,
আমার হাতে জন্মে আর এক হাত পায়ে জাগে আর এক পা
মগজে মগজে জন্মায় নূতন কবির আচানক কবির
নষ্টের সংজ্ঞা পাল্টে যায় আমার হাতে, স্বভাব কবিরের হাতে
এ এক আজব কাল তাই আমিই কেবল বলে দিতে পারি
এ আমার পূর্বপুরুষের দায় কবির করেছে বলে তাই শেষবেলায় এসে
কবিরের কাছে কবির হারে খোলস পাল্টে হয় য়াহমদ
_____________________এক সাদামাটা কবির য়াহমদ।